Wednesday, October 3, 2007

মা



শিশুর জন্মক্ষনে মায়ের জন্ম হয়,
প্রসবের যন্ত্রনা,কান্না কষ্ট ভয়-
কচি মুখ দেখলেই সে সব হয় তুচ্ছ্‌,
ছোট এক মাথাভরা রেশম গুচ্ছ।

মায়ের জুড়ে ওই একরত্তি,
আবদার বা বায়নায় নেই কোনো আপত্তি।
টোলখাওয়া হাসি মুখ দেখে প্রাণ হাসে,
কান্না শুনলেই বুক কাঁপে ভয় ত্রাসে।

মায়েরই হাতটা ধরে হাঁটতে শেখা,
কিম্বা সেলেটে অ আ ক খ লেখা।
ভুতের গল্প শুনে ভয় পেয়ে সোজা,
মায়ের বুকেতে থাকে মুখ তার গোঁজা।

যত রাগ অভিমান মায়েরই সাথে,
তবু খাওয়া চাই ভাত মায়ের পাতে।
সময়ে শিশু থেকে কৈশোরে পা,
খেলাধুলা, বন্ধু, পড়া সিনেমা।

মেয়েও বড় হয় দাদারই মত,
লেখাপড়া গান গাওয়া কাজ তার শত।
ব্যস্ত সবাই বড় দেখা পাওয়া ভার,
সারাদিন কাটায় তারা যার ঘরে তার।

সাবালক ছেলে মেয়ে যায় বাড়ি ছেড়ে,
কোথা থেকে শুণ্যতা আসে তেড়ে।
দায়ের হাড়িকাঠে দিয়েছে বলি,
ছবি আঁকা লেখা আর গান কীটস শেলি।

শখ আলহাদ মুছে গেছে ধীরে ধীরে,
কেটেছে প্রতিটিক্ষণ এদের ঘিরে।
শিখেছিলো নাচ গান পিয়ানো আঁকা,
লেখাতেও হাত ছিল নেহাত পাকা।

আজ বসে একমনে জানালার ধারে,
তানপুরাটায় চোখ তার যায় বারে বারে।
ভাবে,দেখি চেষ্টা ক’রে আরেকবার!
ধুলো ঝেড়ে খাতা বই,তানপুরা তার।

মায়ের খোলস থেকে বেরিয়ে “আমি”,
শুরু করে ছিল যা সবচেয়ে দামী।
গান গায়, ছন্দে লেখে, ছবিও আঁকে,
পূর্ণতায় তার সকল শুণ্যতা ঢাকে।

সমর্পণ


যেদিন তাঁর বিয়ে হয়
নতুন করে সে জন্মায়
শরীর মন আত্মা
নিজস্ব সব সত্তা
সুখ দুঃখ লজ্জা ভয়
স্বামীর চরণে স্থান পায়

স্বামী ধ্যান স্বামী জ্ঞ্যান
অস্তিত্ব জুড়ে শুধু “উনি”
তাঁর এই নিবেদিত মনে
সন্তান কী আছে এক কোনে?
ভয় হয় পাছে তিনি
পুত্র স্নেহে ভেসে যান!

রাখেনি তাই তাকে কাছে
“ওঁর” যত্নের হবে ত্রুটি
নিবি ষ্ট মনে শুধু সেবা
এমনটি আর দেখেছে কে বা
যেন শিব পার্বতীর জুটি
হার মানে এঁদের কাছে

৬৫ বছর কেবল শুনেছেন
করেছেন শুধু “উনি” যা চান
নিজস্ব মত সখ আবদার
ছিঁড়ে করেছেন ছাড়খাড়
“ওঁর” মানেই আমার মান
এইটুকুই শুধু বুঝেছেন

আজ তিনি শয্যাগত
মৃত্যুর সাথে চলছে লড়াই
অবশ দেহ সচেতন মন
চোখ দুটো শুধু খোঁজে একজন
তিনি না দিলে অন্তিম রায়
মৃত্যুও হবে আশাহত

বোবা চোখ দুটি করে প্রতীক্ষা
অকাতরে চান অন্তিম ভিক্ষা
স্বামীর মুখের একটি বাণী
যাও তুমি, আদেশ মানি
মুক্ত হোক তোমার সত্তা
মুক্ত হোক তোমার আত্মা

একলা চল


লালচে ভোর হলদে দুফুর
নীলচে বিকেল কালচে রাত
সবই সমান এঁদের কাছে
আশীতি এই বৃদ্ধ জাত

লাঠির ভরে হোঁচট খেয়ে
কেবল নিজের ইচ্ছে-বলে
কম্পিত পায়ে ন্যুব্জ দেহে
সংসার ভার বইছে চলে

ছবির ফ্রেমে রয়েছে বাঁধা
নাতি নাতনি বৌমা খোকা
ড্রইংরুমের সাইড টেবিলে
একলা ভেবে খেও না ধোকা


বিশাল বাড়ির একটি কোনে
টিমটিমিয়ে জ্বলছে বাতি
নিস্তব্ধ - - - নিঃশব্দ
অশীতি এই দুজন সাথী

চুং চ্যাং কাহিনি















চুং ও চ্যাং, প্রেমী খাঁটি
থাকে তারা বাগুইহাটি
কথা কয় চোস্ত বাংলায়।
ভাবে চ্যাং করি বিয়ে
থাকে চুং পড়া নিয়ে
এখনই কী শাদি করা যায়?
চুং পেয়ে জলপানি
চ্যাঙ্গের বাধা না মানি
রাজধানি এসে পৌছায়।
চ্যাং অভিমানে দাড়ি
লম্বা করিয়া, হাঁড়ি
মুখে, পাড়া চসিয়া বেড়ায়।
চুং এরও দুখের কথা
শুনিলে বাজিবে ব্যথা
বুকে চোখ ভাসিবে ধারায়।
দিল্লীর হাটে গিয়ে
খুশি মনে “সুশী” খেয়ে
চুং দেখে সহসা দাঁড়ায়ে
স্বর্গে সে ,কেন ছাই?
সুশী ছিল পচা তাই
ঈশ্বর হেসে দেন রায়।
আসে পরী হাতে ধরি
নিয়ে যায় যেথা হরি
চোখ মুদি বাঁশরি বাজায়।
ওদিকে এ সংবাদ
শুনে চ্যাং উন্মাদ
চক্ষু রাঙ্গায়ে চিল্লায়-
বজ্জাত পাজি মেয়ে
দিল্লীর সুশী খেয়ে
আমারে ছেড়ে এ বরষায়,
পালালি কোথা, কী জানি!
চীনা হয়েও জাপানী
সুশী খেলি,কোন ভরসায়?
রাজধানী ভরা নামি
কত রেস্তোঁরা দামী
চাউমিন খেতে লাগে গায়?
আয় ফিরে শিগিগর
পারিনা থাকিতে স্থির
ভাবি,খুন করে গঙ্গায়,
ভাসিয়ে দি চুং তোরে
না এলে এখুনি ওরে
ঘুষ দিয়ে যমের ব্যাটায়।
চ্যাং এর শাসানি শুনে
চুং শুয়ে ফুলবনে
ভাবে ফেরার আছে কী উপায়?
যদি বা সে ঘরে ফেরে
কায়া তো থাকিবে না রে
চ্যাং যদি তাহারে ডরায়!
না,তা কী করিয়া হয়
প্রেমেরই হইবে জয়
চ্যাং ঠিকই চাহিবে আমায়।
চুং এটা করে স্থির
অশরীরী স্বীয় শরীর
ফুটা দিয়া গলায় পালায়।
তারপরে ভেসে ভেসে
চুং আসে যেথা মেসে
কেঁদে চ্যাং চক্ষু ভাসায়।
ফিস ফিস করে কয়
কাঁদ কেন আর নয়
একা তুমি-দেখ কে দাঁড়ায়ে?
শুনে চ্যাং মোছে চোখ
ভুলে তার সব শোক
উল্লাসে দু বাহু বাড়ায়ে।
করিয়া চুঙ্গেরে মাফ
দেয় সে বিশাল লাফ
যায় তাকে ধরিতে জড়ায়।
কিন্তু এ হল কী?
সশব্দে সে দেখি
দেওয়ালেতে গিয়া আঁছড়ায়।
মাথাটি ফুলিয়া ঢোল
দ্যাখে চোখ করি গোল
চুং যায় হাওয়াতে মিলায়।
বোঝে আজ চ্যাং ভাই
তাহারে ডাকিতে নাই
একবার “ওপারে” যে যায়।

যুগ বদল



বলি কী!যে যুগে যা সাজে,
হয়তো সে ভালো, কিম্বা বাজে!
এ আমার নিজস্য মতামত,
দেখছি ও শুনছি যা এযাবৎ !

এ যুগের এই যুব সমাজ,
দিলটা এদের বড়ই দরাজ।
প্রেমিক হয়েই থাকবে সাথে,
যে যার মতে, স্পেস রেখে তাতে।

হয়নি বিয়ে? কী বা এসে যায়,
ঝগড়া হলেই আপদ বিদায়!
দু চার জনকে না করে পরখ
বিয়ের মন্ডপে যাবার নেই শখ।

যদি বা তারা করলো বিয়ে
অতি মুশকিলে ছুটি জুগিয়ে,
বাচ্চা কাচ্চা চায় না তো ওরা,
হাম তিন নয়, বেঁচে থাকুক জোড়া।

বাড়ি গাড়ি আর অঢেল টাকা,
এম্বিসনের দৌড়াবে চাকা।
সাধ না পুরালে পঞ্চাশ নিচে,
জীবন দৌড়ে থাকবে যে পিছে।

যাক গে! কেন ভেবে মরি বল?
যুব সমাজের যুক্তি সবল।
তোমরাও তো বদলেছো, না কি?
বদলাই আমরা যা ছিল বাকি।