Saturday, August 8, 2009

ডায়েরির পাতা থেকে


একদিন আমার নাকছাবিতে তুমি জোনাকি এঁকেছিলে!
একদিন আমার হাসির ঝর্ণায় তুমি মুক্ত খুঁজে পেয়েছিলে!
একদিন আমার চোখের ধ্রুবতারার আলোয় তুমি স্বর্গের পথ দেখিয়েছিলে!
একদিন বীরপুরুষ পৃত্থ্বিরাজ সেজে সংযুক্তাকে হরণ করেছিলে...মনে পড়ে?

সেদিন ষোড়শি আমি, বেপরোয়া ভালবাসা আর
উচ্ছৃঙ্খল যৌবনের কালশ্রোতে ভেসে গেছিলাম।
চেনা মানুষের আশ্রয় ছেড়ে
তোমার হাত ধরে পাড়ি দিয়েছিলাম সুদুর ভিনদেশে।

সেখানেই মুখোশ খুললে তুমি।
তোমার আসল ভয়ঙ্কর লোলূপ নরখাদকের রূপ
আমায় স্তব্ধ করে দিয়েছিলো।
ফুলসজ্যার রাতেই নব বধূর সতীত্ত্ব নিলামে তুললে তুমি।

শুরু হোল আরও এক দেহ -পশারিনীর কাহিনি।
নারী দেহ কিনবে বাবু! টাটকা কচি নারী দেহ!
ওদের বয়স দেখো না, ওদের মর্জাদা দিও না।
টাকার বিনিময় জ্যান্ত লাশ কেনো গো, জ্যান্ত লাশ কেনো।

এখন আমার নাকে ঠিকরায় আসল হীরের নাকছাবি।
আমার হাসির ফোয়ারায় সুরার মাদকতা।
আমার চোখের আগুনে ওরা বার বার পুড়ে মরতে আসে।
আজ আমার শরীরের কীমৎ শুনলে তুমি চমকে উঠবে।

শুনেছি তুমি নাকি কোনো এক কুৎসিত রোগে আক্রান্ত হয়ে
সকাল বিকাল ঈশ্বরের কাছে কেবল মৃত্য ভিক্ষে করো! সে কি?
আমার মত আরোও কত প্রেমীর শরীর আত্মা মান সম্মান বিক্কিরি করে
নবাব বাদশাহ, তুমি আজ কিনা ভিক্ষুক?

বা----গল্প


আরে আরে দাদামশাই এস এস এস,

আগে একটা গল্প বল, তারপরে নয় কেশো!

কিসের গল্প শুনবো আমি? ভুতের নাকি রাজার?

রূপকথা আর ভাল্লাগে না, গল্প আছে হাজার।

যেমন ধর হরিয়ানায় মেয়ের নাকি আকাল?

হন্যে হয়ে খুঁজছে কণে যুবক সকাল বিকাল।

কিম্বা ধর রাজধানীতে এক দিনের ঐ বৃষ্টি

ভাসিয়ে দিলো রাস্তা বাড়ি, সিভিল অনাসৃষ্টি।

এই যে দেখি পাস করা সব বেকার আমার দেশে

‘কল লেটারের’ অপেক্ষাতে পাক ধরেছে কেশে।

ধর্ষিতা ঐ পাগলি মেয়ে ভাবছে পেটে ভাই

কোর্ট বাবুরা রায় দিয়েছে প্রসব করা চাই।

চিকেন-গুনি সোয়াইন-ফুলু ‘বাইওলজিকাল ওয়ার’

নাকে মুখে কাপড় বেঁধে পারলে সবাই লড়।

এই দেখ কী কান্ড আমার, নিজেই বকে মরি!

রূপকথারই গল্প শোনাও, রাজা রানি পরি।

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে


বৃষ্টি এলো বৃষ্টি গেলো
ফসল ভিজলো কই
শুকনো মাঠে হল্কা হাওয়া
চাল বাড়ন্ত সঈ।

ঘামের ধারায় ভিজছে দেখি
চিলতে জমি তার
নোনতা জলে নেতিয়ে পড়ে
ধানের শিসের সার।

বৃষ্টি লুকোয় চাসী কাঁদে
কাঁদে সহর গ্রাম
ডাল ভাত শাক গয়না সমান
আকাশ ছোঁওয়া দাম।

বর্ষাকালে গৃষ্ম কেন?
কোথায় কালো মেঘ?
গাছ কোথা আর শহর গ্রামে
বর্ষার সে আবেগ?

সবুজ যতো বৃষ্টি ততো
দুইয়ের ভারি ভাব
গাছের ডাকে চাষীর ক্ষেতে
মেঘ দেয় তার জবাব।

আয় রে ওরে ধরাবাসি
সবুজ ফোটাই রোজ
ঋতু নিজেই আসবে ফিরে
থাকবে না নিখোঁজ।

Sunday, March 15, 2009

ছায়া



একটি ফুলের জন্ম হল নন্দন কাননে। প্রজাপতি ও পাখীদের সাথে সে উড়ে বেড়ায় রামধনুর পথে পথে।আকাশের তারাদের ধরে রাখে হাতের মুঠোয়। চাঁদকে জড়িয়ে সে ঘুমাতে যায় আর সূর্যের চুমোয় তার ঘুম ভাঙ্গে।যে বট গাছের ছায়ায় তার ঘর, সে তার গভীর মমতা দিয়ে আগলে রাখে তাকে।

একদিন আচমকা বট গাছের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আকাশের ভার সইতে না পেরে বটগাছ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো টুকরো হলো সূর্য গ্রহ চাঁদ । রামধনুর পথটাও মিলিয়ে গেল কোথায় যেন। ফুল হবাক হয়ে দেখলো ওর চোখবেয়ে বৃষ্টিঝরছে। প্রতিটা ফোঁটা একটা প্লাবন হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওর পরিচিত সব কিছু।

চোখ মুছবে বলে যেই হাতের মুঠো খুলেছে ওমনি তারারা খসে পড়লো জলোচ্ছাসে। সব হারিয়ে যাবার আগে হাতের মুঠোটা তাড়াতাড়ি শক্ত করে বন্ধ করে ফেললো ফুল। চারটে তারা রয়ে গেল ওর হাতের মুঠোয়। ধিরে ধিরে বৃষ্টি বন্ধ হলো, প্লাবন শান্ত হলো, জল সরে গিয়ে এক টুকরো সবুজের হাঁসিতে ফুলের চোখেও সবুজ ফুটলো।

সেই চারটে তারা দিয়ে সে আবার সৃষ্টি করলো আকাশ, সূর্য চাঁদ। ফুলকে ঘিরে এখন কত রঙ্গিন প্রজাপতিরা খেলা করে। ফুল এখন আর নিজে খেলতে পারে না। সে তাদের রামধনু পথের ঠিকানা বাতলে দেয়। কোন পথে গেলে চাঁদের মা বুড়ির দেখা পবে, কোন জঙ্গলে সোনার হরিণ খেলা করে, কোন দীঘিতে রুই কাতলা কথা বলে, সে সবের হদিস দেয় সে।

আমি সেদিন একটা আশ্চর্য্য জিনিস দেখে একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম। কালের ভারে নুয়ে ফুল দাঁড়িয়ে দুলছে কিন্তু তার ছায়া একটা প্রকান্ড বড় বট গাছ।

এক মুঠো সবুজ


বৃক্ষ বলি পিষ্ট কলি
সবুজ লোপাট,
অরণ্য নাশ পশু পাখি গ্রাস
শূণ্য এ বাট।
মানুষ শ্রেষ্ঠ বিষ্টু কেষ্ট
উন্নতজাত,
গড়ছে শহর ইঁটের নগর
চাঁদ ছোঁওয়া ছাত।
গড়ায় গলদ ভুললো বলদ
সবুজ মেরে ,
গাছ পাতা বন পাখীর কুজন
নিচ্ছি কেড়ে।
তাদের ছাড়া বাঁচবে কারা,
মানুষ মহান?
দূষণ বায়ু কমবে আয়ু
ধুঁকবে পরাণ।
সব হারাবো কোথায় পাব
বুক ভরা শ্বাস?
একটু ছায়া মেঘের মায়া
ফুলের সুবাস?
বৃষ্টি মাতন ময়ুর মাচন
রামধনু রঙ,
মাঠ ভরা ধান কোকিলের গান
হরিণীর ঢং?
ধুসর ইঁটে দিলাম ছিটে
হালকা সবুজ,
ছাই আকাশে যাক না মিশে
নীল রঙ্গা রুজ।
ডানার মিছিল মাছ কিলবিল
ছোট্ট ফরিং,
ডোরাকাটা ভয় পাশে জলাশয়
ঠোকাঠুকি শিং।
ওই যে শিশু বৃন্দা বিশু
রাখবে ধরে,
পাতা শাক ঘাস বাঘ পাখী হাঁস
মুঠোয় ভরে।