Wednesday, February 27, 2008

শান্তি



সুখে থাকবো বলে
শান্তি গেলো চলে,
বড় অভিমানিনী সে।

যখন আয়ের কোঠা
জমতো ছিটে ফোটা,
শান্তি ঘুমোতো ঠিক পাশে

ডাল ভাতে ভরা পেট,
মাদুর-খাট সোফা সেট,
ধারের বই গিলি গোগ্রাসে

উদাত্ত গলায় গান
তালিম বিহীন সুর তান,
শান্তির বেহাগে সুর ভাসে

বাণিজ্যে হলো লাভ
আয় বাড়ে ধাপে ধাপ,
সুখ ধ্বনিত অট্টহাসে

পাই যত চাই ততো
রোজগার অবিরত,
একটুও ফুরসত নেই শ্বাসে

কিনে বইয়ের পাহাড়
সাজিয়ে দিই সার সার,
কফিন ভরা প্রাণহীন লাসে

দামি দামি খান পান
কমজোরি সুখি জান,
চিন্তায় রোগ জীর্ণ ফ্যাকাসে

শান্তি ফিরে এসো
একটু পাসে বসো,
গান গাও, ঘুমাই অনায়াসে

বাঙ্গালীয়ানা

বন্ধু! বাঙ্গালীর বাঙ্গালীয়ানা---
তোমার আমার কী আছে অজানা?

মাছ ডিম মাংস ছাড়া রসুইখানা,
ঠিক যেন সুর তাল লয় বিহীন গানা।

ছুটির সকালে জলখাবার লুচি,
সাথে তরকারি, যার যেমন রুচি।

কষিয়ে মাংস রবির দুফুরে,
মিষ্টি দই, শেষে পান খিলি মুড়ে।

ধুতি পাঞ্জাবি, লাল পেড়ে সাড়ি,
সিগ্রেট, বড় টিপ, আড্ডা রয় জারি।

গ্রুপ থিয়েটার, তর্ক আর আঁতলামি,
এ হলো বাঙ্গালির গয়না দামি।

পরনিন্দা পরচর্চা বিহীন,
বাঙ্গালীর বাঙ্গালীয়ানা হয় ক্ষীন।

বাংলা জাগলে তবে ভারত জাগে,
বন্ধ, মিছিল, স্ট্রাইক, সবেতেই আগে।

ফুটবল ক্রিকেট খেলার নেশায় মাতে,
বাস ট্রামে মগ্ন আলোচনাতে।

কূপমন্ডুক নেই, হয়েছে ঘর ছাড়া
প্রবাসে বিদেশে যাচ্ছে তারা।

সাংস্কৃতিক মিশ্রনেও দেখা যায়
বাঙ্গালিয়ানাটা আছে বজায়।

Saturday, February 23, 2008

দেখেছি তোমায়


আমি দেখেছি তোমায়...
শীত ভোর ঘন কুয়াশায়,
সূর্য্যোদয়ের লালিমায়,
ভাসমান মেঘের নক্সায়,
এক বিন্দু বৃষ্টি পাতায়,
ইন্দ্রধনুষ গরিমায়,
জোৎস্না রুপোলি থালায়,
কচি এক পল্লব শাখায়।

আমি দেখেছি তোমায়...
দারিদ্রের ক্ষুধা জ্বালায়,
ধনোপার্জন লালসায়,
নব বধুটির লজ্জায়,
বৃদ্ধাবাসে প্রতীক্ষায়,
মায়ের প্রসব যন্ত্রনায়,
নব জাতকের কান্নায়,
শবের জ্বলন্ত চিতায়।

প্রতিদিন দেখি তোমায়...
প্রেম, প্রকৃতি, জীবাত্মায়,
তাও কেন খুঁজি পূজায়,
আড়ম্বরে, অর্চনায়?
তোমায় পাবার বাসনায়
খুঁজে পাওয়া ধন হারায়;
সর্বত্র অস্তিত্ব ছায়,
চিনি না, অক্ষমতায়।

Monday, February 18, 2008

জীবন অধ্যায়



কালবৈশাখী ঝোড়ো বাতাস,
শান্ত নদীর বুকে উত্থাল
জোয়ার এনে বলে, প্রেমিক।

বর্ষা ভেজা লাল গোধুলি
আলো, সিঁথির মাঝে লেপ্টে
ফুলশয্যায় শুইয়ে বলে, বৌ।

ভোরবেলার মিষ্টি নরম রোদ,
কচি মুঠোয় আঙ্গুল ধরে
ফোকলা হেসে তোতলায়, মম্মা।

তির্যক চাঁদের অর্ধেক আলোয়,
বাকিটা আঁধারে ঢেকে
ডুকরে কেঁদে বলে, একা।

এক টুকরো জ্যোৎস্না জ্বালায় দীপ,
উদ্ভাসিতো বংশধরের
মুখ; বলে, শেষ থেকে শুরু।

Tuesday, February 12, 2008

ভ্যালেন্টাইন ডে




রাস্তার ধারে আগাছার মাঝে
ফুটেছিলো সে,
হলুদ গোলাপি মেশানো ফুল
তুলে নিই তাকে।
সাধ্য না থাক, সাধ কি আর হয় না
উপহার দিতে?
ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেবো
এক সেট মান্না দে,
কিম্বা শক্তি বুদ্ধর কবিতা
লাল রিবন বেঁধে!
নিদেনপক্ষে ক্যাডবেরি হেম্পার
ভাগ করে খেতে!
ইচ্ছেগুলো এই ছোট্ট ফুলে বেঁধে
যদি দিই, নেবে?
লক্ষীটি! ছুঁড়ে ফেলো না--আজ
ভ্যালেনটাইন ডে।

Monday, February 11, 2008

ভূত রহস্য


কনকনে শীত, গরম খিচুড়ি
বইখানা খুলে, কম্বল মুড়ি।

রাত্রি গড়িয়ে প্রথম প্রহর,
ভুতের কাহিনী, রোমাঞ্চ ঘোর।

আত্মীয় বিনে গৃহ শূনশান,
পরিজন সব ছুটিতে দামান।

মৃদু শব্দ শুনে চমকাই!

না,কিছু নেই, ঘরটা ফাকাই।

ঠিক তখনই বিজলী উধাও,
ঘোর অমানিশা যেদিক তাকাও।

হঠাৎ দমকা হাওয়া, খোলে দ্বার,
ছায়া অবয়ব দাঁড়িয়ে-- কার?

খিলখিল হেসে এগোয় সমুখে
ঠক ঠকা ঠক তাল ঠুকে ঠুকে।

খ্যানখ্যানে বানি ক্ষোনা স্বরে,
ইস্, কচি মাংসের গন্ধ ঘরে!


বারোমাস বুড়ো হাড্ডি চিবাই,
শ্মশানে দু-চার যা জোটে তাই।

এদিকে গিন্নীর লেটেস্ট বায়না,
ফাসট্ ফুড ছাড়া মুখে রোচেনা।

কেএফসি’র ফ্রাইড চিকেন খাবেন,
নইলে আমায় ডিভোর্স দেবেন।

বোঝালেও বোঝে না ম্যাডাম
বার্ড-ফ্লু রোগে শেষ চিকেন তামাম।

আজকে ঘোচাবো গিন্নীর নোলা;
ফেটিয়ে খানিক ব্যাসন গোলা,

তাতে চুবিয়ে স্লাইসড্ মাংস
তোর শরিরের কচি যে অংশ,

কেএফসি স্টাইল, নরমাংস ফ্রাই,
সাথে ব্লাডি মেরি, আর কী চাই?

শুনে দাঁতে দাঁত, ভয়ে চুল খাড়া,
ভূ--ত! চিৎকারে জাগাই পাড়া।

হাবুদার স্বরে ভুত বাবাজি
বলে, দূর বোকা! হারলি বাজি।

কলার তুলে মেরেছিলি চাল,
ভূত-পেত্নিরা সব বোগাস আর জাল।

পেলে কোনোদিন ভয়, দিবি ট্রীট্
ওহ ক্যালকাটা অথবা পার্ক স্ট্রীট্।

বলি, বে বে বেশ দিলাম কথা,
রাতটা এখানেই থাক্ হাবুদা।

Sunday, February 3, 2008

অবাক




অবাক হয়ে তাদের দেখি!
হিম শীতের শিরশিরে ভোরে,
রোদের নক্সিকাঁথা গায়ে
ফুটপাথে ঘুমায় অঘোরে।

অবাক হয়ে তাকে শুনি!
ট্রেন কামরায় ভিক্ষে করে গান,
ওস্তাদ সুরের সুরতাজ পরে
পায় দিনান্তে খুচরো সম্মান।

অবাক হয়ে তারা বলে,
জমিনটুকুন নিলে কেড়ে?
শিল্পায়নের প্রস্তুতিতে
বলছো, ভিটে যেতে ছেড়ে!

অবাক হয়ে পড়ছি কাগজ,
হত্যালীলা চলছে স্কুলে,
বন্দুকধারি দুধের শিশু
শিক্ষাস্থানেই শিক্ষা ভুলে।

ছোট্টো অবাক অনুভূতি,
নির্বাক হয়ে চলছিল বেশ!
চাইলাম কথা ফুটুক লেখায়
বিবেক বলে, আহা! বেশ!বেশ!

অহম স্যার(Ego Sir)

মানছি আমি, বেজায় দামি
তোমার অহমবোধ,

অন্য যারা, সস্তা তারা
নিতান্ত নির্বোধ।

তুমিই নাকি বিজ্ঞ, বাকি
সবাই অকাট মুখ্যু,

বলে অযথা, বেমানান কথা
পালিশবিহীন রুক্ষু।

পেয়ে খোসামোদ অহমিকাবোধ
ফুলে ফেপে বেড়ে ওঠে,

দিলে তাকে ছেঁটে, মাপমত কেটে
কষ্ট দেবে না মোটে।

জ্ঞানি গুণি যারা, জ্ঞান বাটে তারা
তবে পায় সম্মান,

অহমের চাপে, নামে ধাপে ধাপে
ক্ষয় অর্জিত মান।

অহমিকা স্যার, মিনতি আমার
নিজেকে ভেবোনা ভিন্ন,

বন্ধু তোমার যত আছে, তার
বন্ধন হবে ছিন্ন।

হবে বড় একা, চারদিক ফাঁকা
নির্জনতায় একক,

মানুষেরা জানি সামাজিক প্রাণী
একা বড় ভয়ানক।