Tuesday, September 2, 2008

আমি কবি


চিৎকার করে বলি
দেখ! আমি কবি!
লিখি অবিরত
ভাবনা যত, সবই।


নাই বা মিললো ছন্দ
নাই বা বুঝলে অর্থ,
তা বলে কি কবির
দোয়াত কলম ব্যর্থ?

চিন্তা আমার ভ্রমর
শত ফুলের প্রেমিক,
কারও ঠোঁটে সুধা
কারও সে বিষাধিক।

নিত্য খুঁজি শব্দ
খবর খুঁটে খুঁটে,
সৃষ্টি ধ্বংশ ঘেঁটে
কাব্য যদি ফোঁটে!

মেঘের ঝারি ভেজায়
রোদে তরতাজা,
নুইয়ে মাথা ঝড়ে
পরক্ষনে সোজা।

স্ব-ঘোষিত কবি ,
সৃষ্টির ভক্ত আমি,
নিত্য ধ্বংশ মাঝে
এক ফোঁটা সুখ দামি।

Saturday, August 23, 2008

লাল শিউলি


ভাদ্রের শেষ বিকেলের রদ্দুর
বিদায় নেবার আগে
হাঁটু মুড়ে বসলো জানালায়।
চোখে তার স্বচ্ছ
নীল আকাশ,
করতলে শিউলির সুবাস।


কাল মহালয়া।
মায়ের আগমনের বারতা
জানাতে এসেছে সে।
কিন্তু দু চোখে এত বিষাদ কেন?
চোখের জল লুকালো,
রদ্দুর মুখ ফেরালো।


রাত এলো
ভয়ানক রূপ ধরে।
বোমার গর্জন, আহতের আর্তনাদ,
মৃত্যুর নিস্তব্ধতা।
শিউলির শুভ্রতায় লালের দাগ,

সুরে বিষাদের রাগ।

আশ্বিনের শিরশিরে নরম ভোর
আশা জাগায় আগামীকালের।
দুর্গতিনাশিনীর ত্রিশূলাঘাতে
হবে নাশ
আতঙ্কবাদের ভাষা,
ফিরবে আশা, ফিরবে ভালবাসা।

Thursday, August 21, 2008

ত্রিনয়ন :


বিসর্জনের ঢাকের আওয়াজ মেলাবার আগেই এক দঙ্গল ছোট ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়লো গঙ্গায়। তাদের বয়স সাত থেকে পনেরো। মায়ের গয়না, অস্ত্র, কাঠামো, যে যা পারছে উদ্ধার করছে। স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে তারা কাড়াকাড়ির উল্লাসে মেতে উঠেছে। এর বিনিময় কিছু টাকা রোজগার করা যায় প্রতি বছর।

ভোলা এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এই তার রোজগারের প্রথম প্রচেষ্টা। অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে কিছুই যোগার করতে পারলো না সে। ক্লান্ত ভোলা হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ডাঙ্গার কাছে পৌঁছে গেছে, ছোট্ট একটা মাটির ঢেলা হাতে এসে ঠেকলো। ভোলা তুলে নিয়ে দেখে মা দুর্গার ভাঙ্গা মুখ। একটা কান নেই, দু ছড়া চুল কোনোরকমে আটকে আছে, নাক চটে গেছে, একটা চোখ ধুয়ে বিবর্ণ। কিন্তু সে আশ্চর্য হয়ে দেখে, ত্রিনয়নীর তৃতীয় নয়ণ সজীব হয়ে জ্বলজ্বল করছে, যেন এইমাত্র তুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে। ভোলা মুখখানা গামছায় বেঁধে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

আজকাল তার বাড়িতে থাকতে একদম ভাল লাগে না। রোজ রাতে বাবা মাতাল হয়ে মাকে অশ্রাব্য গালাগাল দেয়, মারধরও করে। মায়ের যন্ত্রনাকাতর চোখদুটো আর ছোট ছোট তিনটে ভাইবোনের ভয়ার্ত কান্না তাকে তাড়া করে ফেরে। পয়সার অভাবই যে সব কিছুর মূলে, ছোট্ট ভোলা তা বুঝে গেছে। তাই সে ঠিক করেছে কিছু রোজগার তাকে করতেই হবে। মায়ের স্বপ্ন ভোলা লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হলে তাদের দুঃখের দিনের অবসান ঘটবে।

সে রাতেও বাবার রণচন্ডি মূর্তি দেখে আর জড়ানো গলায় গালাগাল শুনে ভাইবোনেরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। বাবা টলতে টলতে এসে সজোরে তাদের গালে ঠাস ঠাস করে থাপ্পর মেরে মায়ের চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালে ঠুকে দিলেন। সব মায়ের দোষ - বেকারত্ত্ব, এতগুলো অকালকুষ্মান্ড জন্ম দেওয়া, দুবেলা ঠিকমত খেতে না পাওয়া, সব সব।

ভোলা কানে আঙ্গুল দিয়ে ঘরের কোনায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সন্তর্পনে গামছা খুলে মায়ের মুখখানা চোখের সামনে ফিসফিস করে বলল, তোমার তো তিনটে চোখ, কিছুই দেখতে পাও না?

হঠাৎ মায়ের ত্রিনয়ন থেকে আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত হয়ে চারিদিক আলোকিত করে তুললো। যেন হাজার ঢাকে কাঠি পড়লো। শঙ্খ আর উলুদ্ধ্বনিতে চতুর্দিক মুখরিতো। পুরুত মশাইয়ের ধুঁনুচির ধোয়ায় সামনেটা আচ্ছন্ন।

ধীরে ধীরে ধোঁয়ার পর্দা সরে গেল। নজরে এল টলটলে একটা দীঘি, নারকেল গাছের সারি। ধবল গাইরা কৃষ্ণচূড়া গাছে তলায় বসে নিশ্চিন্তে জাবর কাটছে। দীঘির ধারে ওরা কারা বসে? হ্যাঁ, ঐ তো তার মা বাবা! বাবার পরনে পরিষ্কার হাফ হাতা শার্ট আর পাজামা। মায়ের চুলে বাহারি খোঁপা, গায়ে ডুরে শারি। ভালবাসার প্রতীক যেন তারা। হাতে হাত রেখে মা লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে নতমুখে বসে আছেন আর বাবা সজত্নে তাঁর কপালে উড়ে আসা চুল সরিয়ে দিচ্ছেন।বাবা মাকে এত ভালবাসেন? তাহলে এখন কেন এমন বদলে গেছেন? অভাব? ব্যর্থতা? অক্ষমতা? তাই হবে!

ঐ তো! মাঠে ওরা চার ভাইবোন খেলা করছে। সকলের গায়ে ফর্সা ছিটের জামা, মুখে তৃপ্তির হাসি। রঙ্গিন প্রজাপতির মত ছুটে বেড়াচ্ছে। খেলতে খেলতে ছুটকি পড়ে গিয়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললো। মা বাবা ছুটে এলেন ওদের কাছে। বাবা ছুটকিকে কোলে তুলে একটা হামি দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিলেন। ওমনি ছুটকি চুপ। বাবার গলা জড়িয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।

চার ভাইবোন মা বাবার হাত ধরে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরলো। তারপর মা যত্ন করে কত কি রাঁধলেন! ডাল, শুক্ত, মাছ, মাংস, চাটনি, পায়েস। এত সব খাবার একসাথে কখনই খায়নি তারা। মায়ের হাতের রান্নার কি স্বাদ! সকলকে বেড়ে ছুটকিকে খাওয়াতে বসলেন মা। ভোলা তৃপ্তি সহকারে খেতে খেতে দেখলো বাবা মায়ের দিকে চেয়ে হাসছেন আর বলছেন, অনেক পুণ্যি করে তোমায় পেয়েছি। মায়ের মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো।

খাওয়া দাওয়া সেরে ভাইবোনেরা মা বাবার মাঝখানে শুয়ে পড়লো। কত গল্প শোনালেন ওঁরা। রাজা রানির গল্প, রাক্ষসের গল্প, পরিদের গল্প। শুনতে শুনতে কখন যে চোখ দুটো ঘুমে ভারি হয়ে এসেছে টেরই পায়নি ভোলা।

ঝনঝন করে বাসন ছোঁড়ার আওয়াজ আর মায়ের ‘মা গো’ বলে রক্তাক্ত কপাল চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না ভোলার কানে পৌঁছালো না।

সে এখন মা দুর্গার তৃতীয় নয়নের আলোকপথ ধরে দূর রাজ্যে পৌঁছে গেছে, যেখানে সে ভালবাসার আলো গায়ে মেখে, ফুসফুস ভরে বিশ্বাসের বাতাস টেনে সুখের ঘাস-গালিচায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। ভোলার আলগা হয়ে যাওয়া হাতের মুঠোয় মায়ের ভাঙ্গা মুখে, ত্রিনয়নের উপর টলটল করছে ওর চোখের কোন থেকে গড়িয়ে আসা এক বিন্দু জল।

Monday, July 7, 2008

দানব


ছোট্ট মেয়ের ডাগর চোখে
মরুভূমি সাজে ,
জলপ্রপাত নদী সাগর
হারায় বালির ভাঁজে।
রূপকথার ঐ দৈত্য দানব
প্রায় আসে তার কাছে,
দাঁত নখ দিয়ে খুবলে লুকায়
আত্মীয়তার মাঝে।



বলবে কাকে? সাপের ফণা
শাসায় ছোবল মেরে,
বোবা ঠোঁটের আর্তনাদে
শৈশব নেয় কেড়ে।
বাইরে মানব ভিতর দানব
সুযোগ পেলেই তেড়ে
গিলতে আসে, হোক না শিশু!

তাকেও দেয় না ছেড়ে।

Monday, June 2, 2008

জাল


মাকড়শার জালের
সু-কৌশল বুনটে
আটকে গেছিলো দৃষ্টি।
কবে, ঠিক মনে পড়েনা।
এক সুতো থেকে
আরেক সুতোয়
জড়াতে জড়াতে
আমি এখন
ঐ জালেরই এক নক্সা।

চেষ্টা করেছি,
বোধ অনুভূতির
শাবলাঘাতে
সুড়ঙ্গ কেটে বেরোনোর।
ঘন কুয়াশায় হারিয়ে যাই।
কদাচিৎ,
রোদের স্পটলাইটে
আবছা দোতলা বাড়ি,
চেনা চেনা মা ডাক।

পরক্ষণেই,
মুশলাধার বৃষ্টির
দেওয়াল চারিধারে।
একা আমি,
রামধনুর কাছে ধার করে
শিশিরে রঙ ভরি,
মেঘের পোষাক বানাই।

কারা যেন আসে যায়।
জাল কেটে
মুক্ত করার চেষ্টা।
পারে না।
আমি যে এখন
নিজেই বুনি নিরন্তর,
মাকড়শার জালের চেয়েও
সুন্দর, ঘন, নিশ্ছিদ্র।

সাদা পোষাক আর

অষুধের গন্ধের সাথে
একটি শব্দের আনাগোনা......

'য়্যালজাইমার'।

Saturday, May 31, 2008

দাম্পত্ত্ব কলহ = প্রেম?


ভোর থেকে হয় শুরু
গর্জন গুরু গুরু,
কর্তা গিন্নি তার সপ্তকে
ঝগড়া করেন শুরু।

(ভোর)
সারারাত ডাকো নাক
যেন জোড়া জয়-ঢাক,
চোখের পাতা এক করে দায়
আমারই রটন লাক!

(সকাল)
আজও ভুললে ঝিঙ্গে
রুই না এনে শিঙ্গে?
ফুলকফি বেমালুন ভুলে
এক গাদা চিচিঙ্গে।

(দুফুর)
এ কী রান্নার ছিরি
নুনকাটা বিচ্ছিরি!
থালা বাটি ছুঁড়ে কর্তা
ধরান রেগে বিড়ি।

(ভর-দুফুর)
বেহাগ সুরে কান্না
এ সংসারে আন্না!
আজই যাবো জাহান্নামে
নিজেই কোরো রান্না।

(সন্ধ্যা)
সন্ধ্যাবেলায় রিমোট
কেন্দ্র করে বিস্ফোট,
সিরিয়াল না খেলা দেখবে
এই নিয়ে ঘনঘোট।

(রাত)
মশারি টাঙ্গাবে কে?
রোজ আসো দেরিতে,
মশার কামড়ে প্রাণ যায় যায়
সব কাজেতেই ‘ইয়ে’।

ষাঠ বছরের লড়াই
শুনছি পাড়ার সবাই,
কিন্ত দাদা বৌদির মত

প্রেমিক আমরা থোরাই?

Friday, May 30, 2008

এক ফালি চাঁদ



ভোরের লালিমা গালে,
সোনালি রোদের অভ্র
ছড়িয়ে চোখের পাতায়,
সাতরঙ্গা প্রথম চুম্বন।

বসন্তের মদিরার নেশায়,
বাঁধ ভাঙ্গা জলোচ্ছাসে
ভেসে যায় সংযমের ভেলা,
মুছে যায় নিষেধের গন্ডি।

মধ্যাহ্ণের দাবানল পুড়িয়ে দিয়ে
চলে যায় অন্যত্র, অন্যখানে।
কুমারি মরুভূমির বুকে
স্তব্ধ সূর্যাস্ত।

ভোর থেকে রাত অমাবশ্যা,
খরকুটো ধরে বাঁচা,
গর্ভের ঐ এক ফালি চাঁদ
এক আকাশ পূর্ণিমা।

Monday, May 19, 2008

প্রত্যাবর্তন


এলো চুলে অপমানের জট,
লুটাচ্ছে লাঞ্ছনার আঁচল।
অত্যাচারের ট্যাটু
শরীর জুড়ে নক্সা।
এক যুগ কান্নার সমূদ্র,
অতলে তলিয়ে যাবার
তীব্র বাসনা।

এক সারি আহ্লাদি ঢেউ
আঁছড়ে পড়ে পায়ের ওপর।
সমাজের প্রতিক হয়ে
চাইলো ক্ষমা।
আলতো আঙ্গুলে ছাড়ালো জট
মুছে দিয়ে নক্সা
খুলে দিলো শেকল।

ফেনিল জলে সমাধি হলো
ভয় দুর্বলতা আপোস।
ভিজে বালুচরে
জোড়া পদচিহ্ন,
বলিষ্ঠ, আত্মবিশ্বাসে ভরা।
ঋণ পরিশোধের অঙ্গিকারে,
সমূদ্রকে পিছনে ফেলে
জনারণ্যের দিকে।

Wednesday, May 14, 2008

স্বপ্নের পশ্মিনা


বারান্দায় রদ্দুরে আরাম-কেদারা,
এক কাপ ধূমায়িতো কফি।
স্বপ্নের পশ্মিনার ঊষ্ণতায়
নিশ্চিন্ত সুখের আমেজ।
বলদে টানা জীবন
স্পেস-শিপে--
এক যুগ এক সেকেন্ড।

রদ্দুরের দিক-পরিবর্তন,
পশ্মিনার ফুটো দিয়ে
শব-শীতল বাস্তবের চাবুক।
নিপুণ হাতে মেরামত,
ছেঁড়া সুতো দিয়ে বুনি
নতুন আরেক,
আবার, আবার, বারবার...।

Sunday, May 4, 2008

হুলোর হুজ্জতি



হলদেটে হাড়গিলে
হাঁসিদের হুলোটা,

হুস হুস করে ফোঁকে
হাফ ভাঙ্গা হুকোটা।

হেঁসেলের হাঁড়িতে
হলুদ মাখানো কৈ,

হাত পুরে হরপায়
হ্যাট হ্যাট হৈ চৈ।

হুট করে ঢুকে যায়
হাবুদের বাগানে,

হাঁস মুখে নিয়ে ছুট
হারানের দোকানে।

হ্যাংলামি থামে না
হুলো দেয় দুধে মুখ,

হালার পো হালা তুই
হর দিনই ছুক ছুক!

হুলো হোয়ে বন্দী
নদীতে বিসর্জন,

পরদিন হাবু দেখে
হুলো আসে হন হন।

হায় হায়!হবে কী যে
ডুবলেও মরে না,

নয় জান বর পেয়ে
হুজ্জতি থামে না।

Tuesday, April 29, 2008

শৈশব ও দ্বিতীয় শৈশব


হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজে চলে শিশু,
নতুন গন্ধ নতুন স্বাদ।

হতে চায় সে পরিচিত
শৈশবের নির্ভিকতায়।


পৃথিবী তার হাতের মুঠোয়;
ছুঁইয়ে চেখে দেখা চাই সব।

পছন্দের সাথে অমিল হলেই কান্না,
কোল চুমু আদর,

শিশুর হাসিতে শৈশবের জয়।

হামাগুড়ি দিয়ে কী যেন খোঁজে বৃদ্ধ,
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি?
নাকি,
কোনো অমূল্য রক্তের বন্ধন
যা কবে যেন আলগা হয়ে
ছিন্নভিন্ন ছড়ানো।

একাগ্র একনিষ্ঠ খোঁজ,
নিজেরই বিষ্ঠায় হোয়ে মাখামাখি ;
ঝাপসা চোখের জল আর
গড়িয়ে পড়া লালার পুকুর।


খেয়েই খাবো বলে কান্না,
খেতে দিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার।

শিশুসুলভ আচরন--
শৈশবের রত্ন,
দ্বিতীয় শৈশবে তা
বড়ই অবাঞ্ছিত, বড়ই দুঃসহ
বড়ই যন্ত্রনাময়।

Friday, April 25, 2008

ভাবছি


ভাবছি----

আফ্রিকার জঙ্গলে যাবো ঘুরতে।

ধার করে আনবো কিছু

হিংস্র ভালবাসা
হিংস্র স্বাধীনতা
হিংস্র সরলতা
হিংস্র মর্য্যাদা।

সভ্যতার সাথে মিশিয়ে দিলে

যদি---

মানুষ 'মানুষ' হয়ে ওঠে!

Sunday, April 20, 2008

একটি উদ্ভিদের জন্ম



গাছকে সেদিন বলতে গেলাম,
বাঁচতে শেখাও!
ভালবাসতে শেখাও!
ভরপুর অক্সিজেন নিয়ে
সুস্থ থাকতে শেখাও!

দেখি, গাছ ধুঁকছে।
গায়ে বিভৎস ফোঁড়া,
কচি বাকল কুঁচকে বৃদ্ধ
ডালপালাগুলো খাবলানো ন্যাড়া।

'কেমো থেরাপির' পর যেমন হয়!

গাছ কাঁদলো না,
নালিশ জানালো না,
কয়েকটা ফোঁড়ায় ঢাকা
বিবর্ন বিকৃত পাতা
থরথর করে কেঁপে উঠলো।

হয়তো মনের ভুল!
কিন্তু স্পষ্ট শুনলাম
তার অন্তর- নিংরানো দীর্ঘশ্বাস।
শ্বাসটুকু বলে গেল,

বাঁচো, ভালবাসো, সুস্থ থাকো--

কিন্তু একা নয়
আমায় সঙ্গি করে ---

আমি হাত বাড়ালাম।
এক বিন্দু লুকিয়ে থাকা শিশির কণা
টুপ করে পড়লো করতলে।
দু ফোঁটা নোনতা জলের সাথে মিলন হলো,

একটি উদ্ভিদের হলো জন্ম ।



Wednesday, April 9, 2008

অর্কুটেশ্বরী





'সাইবার’' যুগে অসুরদের দুরাচার খুব বেড়েছে। ‘হ্যাকাসুরের’' নেতৃত্ত্বে নের্ট বাসিদের যত্নে সাজানো নগর, বাগান, ছবিঘর, জলসাঘর তছনছ করে দিচ্ছে তারা। ওরা নাকি ‘কোড-সাগর’' মন্থন করে এমন সব গোপনীয় অস্ত্রের সন্ধান পেয়েছে , যা দিয়ে যে কোনো নের্ট বাসির ভোল পালটে, ভাইরাস বোমা নিক্ষেপ করে, সেই অভাগার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সকলকে এক নিমেষে নিঃশেষ করে ফেলতে পারে।

হ্যাকাসুরের উচ্চাশা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইদানিং নের্ট ছেড়ে ব্লর্গে গিয়ে, তার চ্যালা চামুন্ডা নিয়ে লীলা-খেলা সেখানেও শুরু করেছে। ব্লগবানেরা অসুরদের অত্যাচারে ব্যতিব্যাস্ত।যতক্ষন ওদের গুন্ডামি নের্টে আবদ্ধ ছিল ততক্ষন তাঁরা অতো গা করেননি। অপ্সরাদের নাচ আর সুরা ছেড়ে কেই বা আজকাল অন্যের চর্খায় তেল দেয়? কিন্তু এখন তো সরাসরি ব্লর্গে ঢুকে পড়েছে ব্যাটারা। আর তো নির্বিকার থাকা যায় না!


ব্লগবানেরা আগেই ভগবানেদের গল্প শুনেছেন, তাই কেউ আর এগিয়ে এসে হ্যাকাসুরকে বধ করার জন্য ভলানটিয়ার করলো না।
অনেক শলা পরামর্শ করে তাঁরা ঠিক করলেন যে সকলে নিজেদের শক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে এক দেবীর সৃষ্টি করবেন, যিনি একাই পারবেন হ্যাকাসুরের মত দুষ্ট অসুরকে দমন করতে। আজকাল মর্তে নারীরা নাকি একই সঙ্গে ঝাঁটা খুন্তি কলম ইঁদুর, আরও কী সব যেন ব্যবহার করছেন। তাই, হ্যাকাসুরকে যদি কেউ বধ করতে পারে, সে একমাত্র নারী।


পুরো সাড়ে আটানব্বই ঘন্টা সাতচল্লিশ মিনিট আর দুই সেকেন্ড লেগেছিল সেই সর্ব শক্তিমতি দেবীকে সৃষ্টি করতে। তার মধ্যেও কিছু সময় নষ্ট হয়েছিল কফি-ব্রেক আর টি-ব্রেক এ। তাছাড়া ব্লগবানেদের মত বিরোধ, তর্কাতর্কি তো ছিলই।কার শক্তির ধার বেশি, কার বুদ্ধির শান বেশি, এই সব আর কি! যাই হোক, শেষ পর্যন্ত এক অপরূপা দশভূজা দেবীর সৃষ্টি হলো। এই সর্বগুণসম্পন্না শক্তিরূপিনীর নামকরন হলো 'অর্কুটেশ্বরী'।

সাইকেডেলিক লাইট, পপ মিউসিক , চিয়ার-লীডারদের নাচ আর হেভি বেটিং-এর মাঝে চলছে যুদ্ধ। সে কী ভয়ানক লড়াই মা গো, দেখলে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা। অর্কুটেশ্বরী আবার খুব ফ্যাশান-কনসাস; তাই বিরতির সময় তিনি পোশাক বদলে মেক-আপ একটু টাচ আপ করে আসছেন। হ্যাকাসুরও কিছু কম যান না। তিনিও বিরতিতে একবার পোনি টেল বাঁধছেন, একবার ডান কান থেকে দুল খুলে বাঁ কানে পরছেন।

আমি বর্তমান কাল ব্যবহার করলাম কারণ যুদ্ধ এখনও চলছে। ফলাফল কি হবে কেউ বলতে পারছে না। ভারতীয় জ্যোতিষ, ট্যারো, চাইনিজ এস্ট্রলজি প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন ভবিষ্য-বাণী। দেখা যাক কী হয়!

জয় অর্কুটেশ্বরীর জয়!! হ্যাকাসুর আর তার নন্দি ভৃঙ্গিদের অত্যাচার থেকে আমাদের বাঁচাও মা!!!!!!!!

Friday, April 4, 2008

সব্বনাশা নেশা


চলছিলো বেশ খাসা,
রেঁধে বেড়ে নিদ্রা দিয়ে
ছবির মত বাসা।

হঠাৎ কী যে হলো,
ইঁদুর হাতে পড়লো ধরা
ওমনি বধু মোলো।

জানলা গেল খুলে,
দেশ বিদেশের বন্ধু আসে
বোতামগুলো ছুঁলে।

গল্প পদ্য ছড়া,
হঠাৎ লাগে জীবনটাকে
রূপকথাতে গড়া।

ভুললো নাওয়া খাওয়া,
রাত্রি দিবস কুটুর কুটুর
লাগলো নেট-এর হাওয়া।

পুড়লো সেদিন মাংস,
একদিন দুধ শুকিয়ে ধোঁওয়া
কেকের বাটি ধ্বংস।

রূপকথাতে রাক্ষস,
গপ গপিয়ে হ্যাক করে খায়
মুখোশধারি খোক্ষস।

জানলা হলো বন্ধ,

ইঁদুরখানা ছেড়ে আবার
সুক্ত মাছের গন্ধ।

Tuesday, April 1, 2008

পদ্য-পার



চিলতে রোদের জাদু-প্রদীপ,
ঘষে দিলাম আলতো হাতে
জিন-এর ছায়া পড়লো তাতে।

হুকুম আকা! বজ্র নিনাদ,
ইচ্ছে আমার মেঘ-গালিচায়
যাবো উড়ে দূর সীমানায়।

সৃজন নদীর পদ্য-পারে,
কাব্যি রাজার সাহিত্য রাজ
ভাবন লিখন শাস্ত্র সমাজ।

রাজা প্রজা ফুল পাখিদের
এক-ই ভাষা ওম-কার রব
ভিন্নতার নেই কলরব।

হাজির শুভ্র মেঘ-গালিচা,
উড়াই তাকে ঝড়ের বেগে
মোহের বাঁধন পিছন রেখে।

কিন্তু এ কী! কোথায় সে দেশ?
ঘুরছি আমি দিশেহারা
নাবিক বিহীন ছন্নছাড়া।

মেঘ-গালিচা ছিন্ন-ভিন্ন,
আঁকড়ে খুঁজি, পাই যদি
পদ্য-পারে সৃজন নদি?

Friday, March 28, 2008

বেচুনি


শ্যামলা শুকনো মুখ
দু চোখে ক্লান্তি,
উস্কোখুস্কো চুল কপালে।

কাঁধে ভারি ব্যাগ
দু হাতে থলি,
দ্বিধাগ্রস্থ আঙ্গুল বেল-এ।

ভাত-ঘুম ভাঙ্গা রাগ
কুঞ্চিতো ভুঁরু,
দরজা খুলে হুঙ্কার জোরে।

জ্বালিয়ে খেলে!
কেন গো বাপু
আসো বেচতে ভর দুফুরে?

মিষ্টি কাকুতি,
লিপস্টিক নেলপালিস
একটু দেখাই আপনাকে?

নামি কোম্পানি,
অপূর্ব সব রঙ,
বৌদিকে ভীষন মানাবে।

কালিয়ার হাই
চেপে, বিরক্ত,
ফরেন ছেড়ে এলেবেলে?

সপাটে বন্ধ;
আরো একটা যোগ
'না' সঙ্খ্যার হারে।

ভোরের জল মুড়ি
হজম, টক ঢেকুর,
ক্লান্ত পায়ে পাশের দ্বারে।

Tuesday, March 18, 2008

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়


মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
আঁধার জঠর থেকে আলোয়
জন্মাতে সংশয়,

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
চোখ ফুটলেই লিঙ্গ ভেদের
সঙ্গে পরিচয়,

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
হাঁটতে শিখে লক্ষণ রেখা
যদি বা লঙ্ঘয়,

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
বোবা ঠোঁটে জাগলে ভাষা
খণার পরিচয়,

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
শিক্ষা পেয়ে শিক্ষা দিলে
পুরুষ জাতির সয়?

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
বেগার খেটে সংসারেতে
অগৌরবে রয়,

মেয়ের সব কিছুতেই ভয়।
পুরুষ অহম অটুত রাখতে
সত্তার অবক্ষয়;

চন্দন সাজে ছবির ফ্রেমে
শ্রাদ্ধ মন্ত্র উচ্চারনে
সম্মানীত হয়।

মেয়ের নেই কোনো আর ভয়!!!

Sunday, March 16, 2008

ব্যালেন্সড ডায়েট


মানুষের পাচনশক্তি বড়ই প্রবল;
গালাগালি ধিক্কার অপমানের গরল

নিমেষে হজম ডাইজেস্টিভ জুসে গুলে,
আপোস-স্থলিতে চালান দেয় ঢেকুর তুলে।

কদাচিৎ যদি মনে গায়ে ধরে জ্বালা
তৎক্ষনাৎ নিন্দা-চর্চার হাজমোলা।

ব্যাস্! নতুন উদ্দমে চলে খানাপিনা,
লড়াই সঙ্ঘর্ষ জিৎ মাৎ, এই নিয়ে জীনা।

তিক্ত অভিজ্ঞতার সাথে অশ্রু নোনতা
মিষ্টি মিথ্যাশ্বাস আর টক ঝাল কপটতা;'

ওয়েল ব্যালেন্সড ডায়েটের মজুদ উপকরণ,
খেয়ে দেয়ে হজম করে পুষ্ট জীবন।

বে-আব্রু


নগ্নতা যখন বে-আব্রু
নগ্নত্বে ছিল না লাজ,
নগ্নীকরন ঢাকলো পোষাক
লজ্জা লিপ্সা তারই ভাঁজ।
অ কে ছেঁটে সভ্য হয় সে
ঢাকলো বসনে গাত্র,
সভ্যতারই নিদর্শনে
হ্যাঁচকা টানে বিবস্ত্র।

বেঁচে আছি


বেঁচে থাকার স্বপ্ন---

খরায় প্রথম বৃষ্টির মত
দুর্ভিক্ষের দেশে অন্নের মত
মরুভূমিতে শ্যামলীর মত
বন্ধ্যা নারীর কোলে শিশুর মত।

বেঁচে থাকার আদর্শ---

বিনা মুখোশে, বিনা মেকাপে,
পোশাকি কথায় নয়,নগ্ন সংলাপে;
কথা দিয়ে রাখতে, নয় খেলাপে
শেখানো না, নিজস্ব আলাপে।

বেঁচে থাকার সত্য---

বাঁচতে গেলে মুখোশ পরে থাকতে হয়
চক্ষু লজ্যায় অন্যের মন রাখতে হয়
রাজনীতিতে মাছ দিয়ে শাক ঢাকতে হয়
স্বার্থের জন্য পরের কৃতি ছাঁটতে হয়।

আমি বেঁচে আছি---

স্বপ্ন আর আদর্শের দুই ডানা মুড়ে
সমাজের এই কালচক্রে ঘুরে ঘুরে
কদাচিৎ ডানা মেলে যাই উড়ে
বাঁচার মত বাঁচি সেই ইচ্ছাপুরে।

Thursday, March 6, 2008

কথোপকথন



দিনে একবার কথা হয় তাঁর সাথে,
নয় রোজের পূজায়।
তখন ফল, বাতাসা, মন্ত্রে ফাঁকি
চোখ ঘড়ির কাঁটায়।
ঝাঁটা, খুন্তি বা ইস্তিরি হাতে
চর্চা নির্দ্বিধায়।
কর্ম বিদ্যা স্বাস্থের খুঁটিনাটি
কিছু কী বাদ যায়?
কতবার মশলা পোড়ে, জল শুকোয়
বলার মগ্নতায়।
বক্তা অবশ্য আমি, শ্রোতা নয়
স্বার্থপরতায়।
আজ হঠাৎ করাঘাত শুনতে পাই
সন্দেহের দর্জায়।
কথোপকথন এক তরফা কেন?
এ ভারি অন্যায়।
তিনি কী শুধু মূক নন, বধীরও
কান দেন না কথায়?
বলি, একবার বলো, আমি শুনি

মন ভরুক কানায়।
ঠিক তখন এক রঙ্গিন প্রজাপতি

বসে জানালায়।
অপরূপ সুন্দর তার রঙের দ্যুতি
চতুর্দিকে ছায়।
সৃষ্টির সুর তাল রঙের জলতরঙ্গ
বারতা পাঠায়।
নির্বাক নিস্তব্ধ প্রতিধ্বনি হয়,

শুনলি কী আমায়?





Monday, March 3, 2008

আমি



খুঁজছি আমি খুঁজছি দেখো
খুঁজছি আপন সত্তাকে,

খুঁজতে খুঁজতে মরছি ঘুরে
অন্ধ গলির ঘুরপাকে।

পাচ্ছি খুঁজে কন্যা মাতা
পাচ্ছি খুঁজে বউমাকে,

পেলাম খুঁজে স্ত্রী ঠাকুমা
ভিন্ন রুপে গিন্নীকে।

দশটা রুপের ভিড়ের আড়ে
হারাই আপন আপনারে।

আমার আমি'র সঠিক প্রকাশ
কোথায় পাবো, বল না রে?

খুঁজতে খুঁজতে পাকলো মাথা
হোলাম বধির অন্ধ মূক,

দেখলাম তাই হিয়ার মাঝে
পেলাম তাকে, ঘুচলো দুখ।

Wednesday, February 27, 2008

শান্তি



সুখে থাকবো বলে
শান্তি গেলো চলে,
বড় অভিমানিনী সে।

যখন আয়ের কোঠা
জমতো ছিটে ফোটা,
শান্তি ঘুমোতো ঠিক পাশে

ডাল ভাতে ভরা পেট,
মাদুর-খাট সোফা সেট,
ধারের বই গিলি গোগ্রাসে

উদাত্ত গলায় গান
তালিম বিহীন সুর তান,
শান্তির বেহাগে সুর ভাসে

বাণিজ্যে হলো লাভ
আয় বাড়ে ধাপে ধাপ,
সুখ ধ্বনিত অট্টহাসে

পাই যত চাই ততো
রোজগার অবিরত,
একটুও ফুরসত নেই শ্বাসে

কিনে বইয়ের পাহাড়
সাজিয়ে দিই সার সার,
কফিন ভরা প্রাণহীন লাসে

দামি দামি খান পান
কমজোরি সুখি জান,
চিন্তায় রোগ জীর্ণ ফ্যাকাসে

শান্তি ফিরে এসো
একটু পাসে বসো,
গান গাও, ঘুমাই অনায়াসে

বাঙ্গালীয়ানা

বন্ধু! বাঙ্গালীর বাঙ্গালীয়ানা---
তোমার আমার কী আছে অজানা?

মাছ ডিম মাংস ছাড়া রসুইখানা,
ঠিক যেন সুর তাল লয় বিহীন গানা।

ছুটির সকালে জলখাবার লুচি,
সাথে তরকারি, যার যেমন রুচি।

কষিয়ে মাংস রবির দুফুরে,
মিষ্টি দই, শেষে পান খিলি মুড়ে।

ধুতি পাঞ্জাবি, লাল পেড়ে সাড়ি,
সিগ্রেট, বড় টিপ, আড্ডা রয় জারি।

গ্রুপ থিয়েটার, তর্ক আর আঁতলামি,
এ হলো বাঙ্গালির গয়না দামি।

পরনিন্দা পরচর্চা বিহীন,
বাঙ্গালীর বাঙ্গালীয়ানা হয় ক্ষীন।

বাংলা জাগলে তবে ভারত জাগে,
বন্ধ, মিছিল, স্ট্রাইক, সবেতেই আগে।

ফুটবল ক্রিকেট খেলার নেশায় মাতে,
বাস ট্রামে মগ্ন আলোচনাতে।

কূপমন্ডুক নেই, হয়েছে ঘর ছাড়া
প্রবাসে বিদেশে যাচ্ছে তারা।

সাংস্কৃতিক মিশ্রনেও দেখা যায়
বাঙ্গালিয়ানাটা আছে বজায়।

Saturday, February 23, 2008

দেখেছি তোমায়


আমি দেখেছি তোমায়...
শীত ভোর ঘন কুয়াশায়,
সূর্য্যোদয়ের লালিমায়,
ভাসমান মেঘের নক্সায়,
এক বিন্দু বৃষ্টি পাতায়,
ইন্দ্রধনুষ গরিমায়,
জোৎস্না রুপোলি থালায়,
কচি এক পল্লব শাখায়।

আমি দেখেছি তোমায়...
দারিদ্রের ক্ষুধা জ্বালায়,
ধনোপার্জন লালসায়,
নব বধুটির লজ্জায়,
বৃদ্ধাবাসে প্রতীক্ষায়,
মায়ের প্রসব যন্ত্রনায়,
নব জাতকের কান্নায়,
শবের জ্বলন্ত চিতায়।

প্রতিদিন দেখি তোমায়...
প্রেম, প্রকৃতি, জীবাত্মায়,
তাও কেন খুঁজি পূজায়,
আড়ম্বরে, অর্চনায়?
তোমায় পাবার বাসনায়
খুঁজে পাওয়া ধন হারায়;
সর্বত্র অস্তিত্ব ছায়,
চিনি না, অক্ষমতায়।

Monday, February 18, 2008

জীবন অধ্যায়



কালবৈশাখী ঝোড়ো বাতাস,
শান্ত নদীর বুকে উত্থাল
জোয়ার এনে বলে, প্রেমিক।

বর্ষা ভেজা লাল গোধুলি
আলো, সিঁথির মাঝে লেপ্টে
ফুলশয্যায় শুইয়ে বলে, বৌ।

ভোরবেলার মিষ্টি নরম রোদ,
কচি মুঠোয় আঙ্গুল ধরে
ফোকলা হেসে তোতলায়, মম্মা।

তির্যক চাঁদের অর্ধেক আলোয়,
বাকিটা আঁধারে ঢেকে
ডুকরে কেঁদে বলে, একা।

এক টুকরো জ্যোৎস্না জ্বালায় দীপ,
উদ্ভাসিতো বংশধরের
মুখ; বলে, শেষ থেকে শুরু।

Tuesday, February 12, 2008

ভ্যালেন্টাইন ডে




রাস্তার ধারে আগাছার মাঝে
ফুটেছিলো সে,
হলুদ গোলাপি মেশানো ফুল
তুলে নিই তাকে।
সাধ্য না থাক, সাধ কি আর হয় না
উপহার দিতে?
ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেবো
এক সেট মান্না দে,
কিম্বা শক্তি বুদ্ধর কবিতা
লাল রিবন বেঁধে!
নিদেনপক্ষে ক্যাডবেরি হেম্পার
ভাগ করে খেতে!
ইচ্ছেগুলো এই ছোট্ট ফুলে বেঁধে
যদি দিই, নেবে?
লক্ষীটি! ছুঁড়ে ফেলো না--আজ
ভ্যালেনটাইন ডে।

Monday, February 11, 2008

ভূত রহস্য


কনকনে শীত, গরম খিচুড়ি
বইখানা খুলে, কম্বল মুড়ি।

রাত্রি গড়িয়ে প্রথম প্রহর,
ভুতের কাহিনী, রোমাঞ্চ ঘোর।

আত্মীয় বিনে গৃহ শূনশান,
পরিজন সব ছুটিতে দামান।

মৃদু শব্দ শুনে চমকাই!

না,কিছু নেই, ঘরটা ফাকাই।

ঠিক তখনই বিজলী উধাও,
ঘোর অমানিশা যেদিক তাকাও।

হঠাৎ দমকা হাওয়া, খোলে দ্বার,
ছায়া অবয়ব দাঁড়িয়ে-- কার?

খিলখিল হেসে এগোয় সমুখে
ঠক ঠকা ঠক তাল ঠুকে ঠুকে।

খ্যানখ্যানে বানি ক্ষোনা স্বরে,
ইস্, কচি মাংসের গন্ধ ঘরে!


বারোমাস বুড়ো হাড্ডি চিবাই,
শ্মশানে দু-চার যা জোটে তাই।

এদিকে গিন্নীর লেটেস্ট বায়না,
ফাসট্ ফুড ছাড়া মুখে রোচেনা।

কেএফসি’র ফ্রাইড চিকেন খাবেন,
নইলে আমায় ডিভোর্স দেবেন।

বোঝালেও বোঝে না ম্যাডাম
বার্ড-ফ্লু রোগে শেষ চিকেন তামাম।

আজকে ঘোচাবো গিন্নীর নোলা;
ফেটিয়ে খানিক ব্যাসন গোলা,

তাতে চুবিয়ে স্লাইসড্ মাংস
তোর শরিরের কচি যে অংশ,

কেএফসি স্টাইল, নরমাংস ফ্রাই,
সাথে ব্লাডি মেরি, আর কী চাই?

শুনে দাঁতে দাঁত, ভয়ে চুল খাড়া,
ভূ--ত! চিৎকারে জাগাই পাড়া।

হাবুদার স্বরে ভুত বাবাজি
বলে, দূর বোকা! হারলি বাজি।

কলার তুলে মেরেছিলি চাল,
ভূত-পেত্নিরা সব বোগাস আর জাল।

পেলে কোনোদিন ভয়, দিবি ট্রীট্
ওহ ক্যালকাটা অথবা পার্ক স্ট্রীট্।

বলি, বে বে বেশ দিলাম কথা,
রাতটা এখানেই থাক্ হাবুদা।

Sunday, February 3, 2008

অবাক




অবাক হয়ে তাদের দেখি!
হিম শীতের শিরশিরে ভোরে,
রোদের নক্সিকাঁথা গায়ে
ফুটপাথে ঘুমায় অঘোরে।

অবাক হয়ে তাকে শুনি!
ট্রেন কামরায় ভিক্ষে করে গান,
ওস্তাদ সুরের সুরতাজ পরে
পায় দিনান্তে খুচরো সম্মান।

অবাক হয়ে তারা বলে,
জমিনটুকুন নিলে কেড়ে?
শিল্পায়নের প্রস্তুতিতে
বলছো, ভিটে যেতে ছেড়ে!

অবাক হয়ে পড়ছি কাগজ,
হত্যালীলা চলছে স্কুলে,
বন্দুকধারি দুধের শিশু
শিক্ষাস্থানেই শিক্ষা ভুলে।

ছোট্টো অবাক অনুভূতি,
নির্বাক হয়ে চলছিল বেশ!
চাইলাম কথা ফুটুক লেখায়
বিবেক বলে, আহা! বেশ!বেশ!

অহম স্যার(Ego Sir)

মানছি আমি, বেজায় দামি
তোমার অহমবোধ,

অন্য যারা, সস্তা তারা
নিতান্ত নির্বোধ।

তুমিই নাকি বিজ্ঞ, বাকি
সবাই অকাট মুখ্যু,

বলে অযথা, বেমানান কথা
পালিশবিহীন রুক্ষু।

পেয়ে খোসামোদ অহমিকাবোধ
ফুলে ফেপে বেড়ে ওঠে,

দিলে তাকে ছেঁটে, মাপমত কেটে
কষ্ট দেবে না মোটে।

জ্ঞানি গুণি যারা, জ্ঞান বাটে তারা
তবে পায় সম্মান,

অহমের চাপে, নামে ধাপে ধাপে
ক্ষয় অর্জিত মান।

অহমিকা স্যার, মিনতি আমার
নিজেকে ভেবোনা ভিন্ন,

বন্ধু তোমার যত আছে, তার
বন্ধন হবে ছিন্ন।

হবে বড় একা, চারদিক ফাঁকা
নির্জনতায় একক,

মানুষেরা জানি সামাজিক প্রাণী
একা বড় ভয়ানক।

Thursday, January 31, 2008

চুক্তিবদ্ধ



প্রেম এসে নীরবে
বলে, আমায় নেবে?
নিবিড় আলিঙ্গনের উষ্ণতায়,
আদরে ভরাবে?

বলি, সে কী আর হয়?
বিনা পরখে নয়---
দেখি তোমার ডিগ্রি, মাসিক আয়,
দাও বংশপরিচয়?

বলে, নেই কোনো আয়,
ভরপুর, স্বপ্ন আশায়---
নীল রক্ত বয় না ধমনীতে
লালের সাথে মিশ খায়।

নিশ্চুপ! অশ্রু ঝরে,
প্রেম প্রতীক্ষা করে---
সমাজের কাছে চুক্তিবদ্ধ
আমি, সে যায় ফিরে!

Monday, January 28, 2008

এক গুচ্ছ হাইকু


( ১)
লাল বেনারসি,
দৃষ্টির মিলনে শপথ
আরক্ত হাসি।


(২)
শীতে চিলতে রোদ
দখলের কাড়াকাড়ি,
ফ্ল্যাটবাসীর সম্পদ।


(৩)
প্রায় বনধ্, বক্তৃতা,
ট্রাম, রিক্সা, বই-মেলা--
আমার কলকাতা।


(৪)
ছুটির দুফুরে,
গল্পের বই, আচার হাতে
শৈশবে ফেরে।








Sunday, January 27, 2008

স্ফুলিঙ্গ


লুকিয়ে টানা
কৈশোরে বাবার সিগারেট,
জানলো অজানা।

হাইস্কুলে প্রায় দিন
টিফিনের পয়সা খরচ,
সস্তায় গোটা তিন।

কলেজে নেশা,
কফি হাউসে চারমিনার
ধোঁওয়ার কুয়াশা।

তারপর?ঐ যা হয়!
দিনে কম করে চল্লিশ
ধোঁওয়াতেই আশ্রয়।

কাশির দমক জোর,
রোজ ভাবে ছেড়ে দেবে
আঁকড়ায় নাছোড়।

ধীরে ধীরে গ্রাস,
বুকের খাঁচার কলকব্জা
বিকল বারোমাস।

ঘুমিয়ে পাড়া,
হাপড়ের মত টেনে
বাতাস কাড়া।

খোকা বলে, না!
বাবাকে খেলো সিগ্রেট,
আমায় খাবে না!

Wednesday, January 23, 2008

ওয়েট লস্


ধুম উঠেছে
সব মেতেছে
ওজন কমার তালে,
ওয়েট্-লস পিল
জিম-এ ট্রেডমিল
ব্যায়াম রোজ সকালে।

পরণে তাদের
হাল ফ্যাসানের
বুটিকের কেনা ড্রেস,
কসরত ফাঁকে
একে ওকে দেখে
জরিপ চলছে বেশ!

জিম-এ এন্তার
প্যাকেজ অফার,
তিন মাসে দশ কেজি
কমলে না পরে
পাবে টাকে ফিরে,
বলো, কে না হবে রাজি?

গুচ্ছের টাকা
দিয়ে জিম-এ ঢোকা
মনে কত অভিলাষা,
তিন মাস পর
হতবাক বর
বলবে, ফিগার খাসা!

মুশকিল হলো,
জিম-এতে ধরালো
কী খাবে-না খাবার চার্ট,
চিনি ঘি বা তেল
খেলে হবে ফেল--
সিদ্ধ সবজি, ইয়োগার্ট।

ব্যয়ামের পর
ক্ষিদে পায় জোর
ছুঁচো দেয় ডন বৈঠক,
বিরিয়ানি টিক্কা
কাবাব ফুচকা
দমে না খাওয়ার শখ।

পুরোলো না মাস
ফেলে দীর্ঘশ্বাস
কসরত হলো বন্ধ,
আজকের ধুম
রেসিপি নতুন
রেঁধে খায় ভাল মন্দ।

Sunday, January 20, 2008

বীরাঙ্গনা




আছি সুখে-স্বাচ্ছন্দে,
খোস মেজাজে আনন্দে;
জানিনা বাঁচার লড়াই,
তবু কত মিছে বড়াই!
কাটলে কদাপি তাল,
চোখে জলে নাজেহাল।

পাড়ার ঠিকে ঝি শেতলা,
রাত দিন খেটে চলা--;
স্বামি করে যত রোজগার,
জুয়ায় হারে তা এন্তার।
ঘরে তিন শিশু, শাশুড়ি,
কাঁধে দায় ঝুরি ঝুরি।

ছোট মেয়ে বোবা তার,
নিজে সে মৃগীর স্বীকার;
পোড়া দাগ হাতে কপালে,
মূর্চ্ছা গেছিলো হেঁসেলে।
পথে ঘাটে বাবু-বাড়ি,
মৃগী ধরে চুপিসারি--!


জ্ঞান ফিরে হাতে ন্যাতা,
ফের কাজে ডোবে সেতা;
চলে গেলে ঠিকে কাজ,
পড়বে যে শিরে বাজ!
চিকিচ্ছে কোরে নিরোগ?
হিসেব থেকে তা বিয়োগ।

রোগা ভোগা ঐ শেতলা,
তবু যেন কত সবলা!
মুখ বুজে হাড় খাটুনি
কখনো নালিশ শুনিনি
এই কী বীরাঙ্গনা?
হার কভু যে মানে না!

বড় খোকা যায় ইস্কুল,
মানুষ করবে নির্ভুল।
বড় হয়ে করে রোজগার,
নিয়ে নেবে তার সব ভার।
মৃগী-ধরা ক্ষয়া শরীর-
খোঁজে নীড়-- শান্তির ।

Friday, January 18, 2008

ভালবাসা কারে কয়


কারে কয় ভালবাসা?
জানা নেই পরিভাষা!
নানা লোকে নানা কথা কয়।

যারে তুমি ভালবাসো,
তারই সাথে কাঁদো হাসো;
সুখে দুখে তারা পাশে রয়।


ভালবেসে ত্যাগ করে,
ভালবেসে মেরে, মরে!
মানে না সে রীতি নীতি ভয়।

ধর্মকে মানে না,
জাতিভেদ জানে না;
কু-আচার কভু নাহি সয়!

সন্তান প্রতি মা’র
প্রেম, সীমা নাই তার
অমর - অজেয় - অক্ষয়!

প্রেমে এলে অহমিকা,
ভালবাসা হয় ফিকা;
দেওয়া নেওয়া এক নাহি হয়।


ভালবেসে আপনারে,
অন্তরে - বাহিরে;

জেনো ভালবাসা কারে কয়!

Wednesday, January 16, 2008

আজব ব্যামো

ধরলো আমায় আজব ব্যামোয়
লিখেই চলি কেবল,
হলেও আবোল তাবোল।

যত্ন করে সাজাই ছন্দে
পদ্য, গল্প, ছড়া,
আবেগ দিয়ে গড়া।

ব্যামোর প্রকোপ যখন অল্প
সবাই বলতো বাঃ!
আরো কেন লেখনা!

জ্বরের পারা যতই বাড়ে
রোজের কাজে ভুল,
দেওয়াল কোনে ঝুল।

সার্ট প্যান্টে ইস্তিরি কই?
টেলিফোন বিল দাওনি?
ড্রাই ক্লীনারে যাওনি?

ব্যামো সারার দাওয়াই খুঁজে
লাগাই ক্ষতে মলম,
বন্ধ খাতা কলম।

ভাবনা চিন্তা পায় না লাগাম
স্বপ্নে আসে তেড়ে,

রাতের ঘুমকে কেড়ে।

কত্তা আমায় বললো,"দেখি
খাতার পাতা খালি,
চোখের কোনে কালি!

আজকে থেকে ভাগ করে নিই
কাজের খুঁটি নাটি,
নইলে লেখা মাটি!”

এখন আমি নিত্যি ভুগে

লিখছি রাশি রাশি,
সুখ - সাগরে ভাসি।

Thursday, January 10, 2008

ফাঁস



(ওরা)------- এখনো বয়সে কাঁচা,
(ওদের)----- দিস না চটকে বাঁচা-
(ওরে)------ বাপ মায়েরা! বুঝতে কী পাস?

--------------কচি কাঁধে তার ভার এক রাশ!
--------------বোঝাবহনের চাপেতে ক্লিষ্ট
--------------শিশু তোর বারোমাস!


(সেই)--------ভোর থেকে রাত আটটা,
(দেখি)-------খেটে চলে শিশু জাতটা-
(আছে)-------ইস্কুল থেকে ফিরে টিউশন
--------------ভূগোল, অঙ্ক, ভাষা, বিজ্ঞ্যান,
--------------প্রথম স্থানটা ফস্কায় যদি
--------------থাকবে কী সম্মান?


(তোকে)----- হতেই হবে রে ডাক্তার,
(বা)----------ইঞ্জিনিয়ার, মোক্তার --
(যদি)--------খেলতে করিস সময় নষ্ট,
--------------দেখতে পাচ্ছি সমুখ স্পষ্ট,
--------------কাটথ্রোট ধার রেসে হেরে গিয়ে
--------------কষ্ট! শুধুই কষ্ট!


(শোনো)------এখনো আছে সময়,
(ওরা)--------ভয়কে করুক জয়-
(দিও)--------অবিরত ওকে তোমার আশ্বাস,
---------------হারলেও সে যে কতখানি খাস,
(নইলে)-------কচি মন ভার সইতে না পেরে
---------------পরবে গলায় ফাঁস!

Friday, January 4, 2008

দম্পতি পাঁচালি


শুন শুন সর্বজন,শুন দিয়া মন,
পরিচিত কাহিনি এক করিনু বর্ণন;

আমাদের প্রতিবেশী দম্পতি রায়
তাঁহাদের মাঝে মিল খুঁজিতাম প্রায়

রায় মহাশয় তিনি বড় বেরসিক,
শিল্পকলায় রুচি নাই তার অধিক।

রায় গিন্নি বিনোদিনী নিয়াছেন শিক্ষা
গুরুদেব নিকেতনে, সেখানেই দীক্ষা।

নৃত্য গীতে সুদক্ষা, গুণী, সুরসিকা;
সুরুচি-সম্পন্না তিনি, তিনি সুলেখিকা--।

একদা জোছনা-মাখা আলোকিত সাঁঝে,
চন্দ্র দেখিয়া বীণা বাজে মন মাঝে;

স্বামীর হস্ত ধরি হাসিয়া সে কয়,
“কি অপূর্ব চাঁদ দেখ!পূর্ণিমা নিশ্চয়!”

শিহরিয়া কর্ত্তা কয়,” সব্বনেশে কথা!
বেড়েছে কি গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যথা?

হায় রে বিধাতা! দেখি এ কী তব লীলা,
এ হেন অমিল জোড়া কেন বা রচিলা???